নীলা

তুহীন বিশ্বাস 

নীলার সাথে অয়নের পরিচয় বন্ধু রাকিব এর মাধ্যমে। নীলাকে দেখেই ভালো লেগে যায় অয়নের। জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু অনিষ্টের জন্য একেবারেই মেয়ে বিমুখ ছিলো অয়ন। তাই সে এক প্রকার পণ করেছিল আর কোনো মেয়ের প্রেমে পড়বে না। কিন্তু মনের কাছে হেরে গিয়েছে অয়ন। নীলার মাঝে খুঁজে পায় আন্তরিকতা, ভালোবাসা আর বিশ্বস্ততা। জীবনের কিছু শূন্যতা কিছু অপ্রাপ্তি ছিল অয়নের। নীলাকে পেয়ে তার মনে হল স্বপ্নে পাওয়া রাজকন্যার মতো। যাকে পেলে সুখী হওয়া যায় জীবনে।  
দিন যায় মাস যায় একে অপরের আরো কাছাকাছি হতে থাকে। এক কথায় দিনের চব্বিশ ঘন্টার খবরাখবর দুজনের কাছেই থাকে। 
নীলা এতোটাই বাধ্যগত হয় যেন অয়নের অজানা সে একটি পা ফেলে না। দুজনের সময়টাও মহানন্দেই কাটছিল। স্বপ্ন দেখতে শুরু করে নীলা ও অয়ন ভবিষ্যৎ জীবন সুখের। 
হঠাৎ একদিন অয়ন খেয়াল করল নীলা আগের মতো নেই। অনেক ক্ষত্রেই অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে। কোন কারণ খুঁজে পায়না অয়ন। অনেক ভেবেছে কিন্তু নীলাকে এখন অবিশ্বাস করতে পারছে না অয়ন। কৌতূহলী প্রশ্ন করলে নীলা ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে যায়। দিন দিন অয়নের সন্দেহ বেড়ে যায়। খুঁজতে থাকে নীলার পরিবর্তনের কারণ। খুঁজতে থাকে নীলার অতীত, বর্তমান। যতোই খুঁজে ততোই অবাক হয়ে যায় অয়ন। নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারেনা। 
এক রাতে নীলা ও অয়ন নেটে কথা বলছিল। তখন রাত প্রায় তিনটা। কথার মাঝে ফোন কেটে যায়। অয়ন সাথে সাথেই নীলাকে ফোন করে দেখে ওয়েটিং। অয়নের বুঝতে বাকি রইল না সামথিং রঙ। নীলা এক মিনিটেই ফিরে আসে অয়নের কাছে। প্রশ্ন করতেই নীলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। কারণ অয়ন কেন তাকে সন্দেহ করছে। নীলা রেগে প্রমাণ স্বরূপ ফোনের শর্ট দেয় অয়নকে। সেখানে মেঘলা নামের কল দেখা যায় ঐ সময়ে। নীলা বলে পাশের বাসার ভাবীর মেয়ে ফোন দিয়েছিল। ভাবী স্ট্রোক করেছে ওরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। অয়নের সন্দেহ আরো বেড়ে যায় শর্ট পেয়ে। সেখানে দেখতে পায় ঐ নাম্বার থেকে একই দিনে মোট চারবার ইনিকামিং কল। তার মানে নীলার কথাটা সত্যি নয়। কেন নীলা মিথ্যা বলছে? অয়ন এর সত্যতা যাচাই করতে পরের দি মেঘলাদের বাসায় যায়। সব শুনে চোখ লাল হয়ে যায় অয়নের। মেঘলার মা ছয়মাস আগে স্ট্রোক করেছিল। এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। অয়ন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। দ্রুত নীলার সাথে দেখা করল। নীলার ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মেঘলা নামের কোনো কল লিষ্টে নেই। এমনকি নীলার ফোনেও মেঘলা নামে কোনো নাম্বার সেইভ পর্যন্ত নেই। তার মানে মিথ্যাবাদী নীলা আগে থেকেই নিজেকে সেইভ করতে সব ডিলিট করেছে। তাহলে কি অয়নের জীবনে আর একটি পরাজয় নেমে এলো ? বিমর্ষ বদনে বাসায় এসে সিদ্ধান্ত নেয় আর যোগাযোগ নয়। আর কাউকে বিশ্বাস করা যায়না।
নীলাকে আরো খুঁজতে থাকে অয়ন। অয়নের সামনে চলে আসে নীলার অতীত ও বর্তমান কিছু ঘটনা। অতীত জীবনে নীলা একাধিক প্রেমে আসক্ত ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধর্মের পুরুষ ছিল। আর বর্তমান? সেটা আরো জঘন্য। খুঁজে পায় বয়সে কম আর একজনের সাথে নীলা জড়িয়ে গেছে প্রেমে। অয়নের হাতে তার কিছু প্রমাণও চলে আসে। 
অয়ন এখন একা থাকে। আর খোঁজে না নীলাকে। কিন্তু নীলা মাঝে মাঝেই অয়নকে নক করে। নীলাকে দেখে মনেই হয়না সে অসুখী বা তার কোনো অনুশোচনা আছে। অয়ন ভাবে, এরাও কি মানুষ! কিকরে অন্যের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে আনন্দ পায়। এই নীলাই নাকি অয়নের কাছে ফুটফুটে এক কন্যা শিশুর মা হতে চেয়েছিলো! পৃথিবীতে এরকম নীলা যেনো আর কোনো অয়নের ভাগ্যে না জুটে। 
স্বভাব আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে সুখেই আছে নীলা। আর একধাপ অস্তমিত হল অয়নের জীবন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(CLOSE) #days=(0)

গল্প পড়ুন, গল্প লিখুন। এখানে টাচ করে দেখে নিন, কীভাবে লেখা মেল করবেন। আপনার গল্প তুলে ধরুন পাঠকের সামনে।
CLOSE