Select language to read news in your own language


গল্পটি পড়ুন এবং আপনার লেখা গল্প Upload করে অন্যকে পড়ান। SatSakal Facebook Page টি লাইক করে সঙ্গে থাকুন।


গায়ের গন্ধ


শুভজিৎ বসাক

অনীতার আর সন্তান হবে না একথা যেদিনই শুভেন্দু শুনল সেদিন থেকে স্ত্রীয়ের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করল। একজন মেয়ে যত পরিণত হয় ততই পৃথিবীর সাথে নাড়ির যোগ চিনে নিতে নিকটস্থ হয়।অনীতাও চেয়েছিল নীলগ্রহের মত মাতৃসুলভ আচরণে সাজতে তবে সব নদীর প্রবাহ যে এক নয় তাই বোধহয় এই নদী অবেলায় মজে গেল।এখন সেখানে শুকনো পলির সমাহার।
সেদিন অনীতা শুভেন্দুকে বলল, "আমি মা হতে পারিনি সেজন্য তুমি বাবা হবে না তা তো হতে পারে না।তুমি চাইলে একটা নতুন বিয়ে করো।আমি স্বেচ্ছায় তোমার জীবন থেকে সরে যাবো।নিজের বন্ধ্যা শরীর তোমার জীবনে অশান্তি আনুক চাইনা,তাই বলছি তুমি বিয়ে করতে পারো"। শুভেন্দু তার দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে বলল, "আচ্ছা, আর তোমার বাবা-মাকে কি উত্তর দেবো?" অনীতা ধীর গলায় বলল, "সে আমি সামলে নেবো। ঐটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না, বিশ্বাস রাখো"। "আচ্ছা, সে না হয় রাখলাম আর আমাদের ভাঙ্গা স্বপ্নকে কি বলব?"-প্রত্যুত্তর করল শুভেন্দু।তা এমন প্রশ্নে অনীতা অবাক হয়ে বলে, "কি? কি ভাঙ্গা স্বপ্ন?"এবারে অনীতার পাশে সরে আসে শুভেন্দু।তার কাঁধে হাত রেখে বলে, "তোমার সন্তান হয়নি এই যে কথাটা বলছো এটা কি খালি তোমার ছিল নাকি আমাদের? তুমি মা হতে চেয়েছিলে তার হাত ধরে আমি বাবা হবো ভেবেও হইনি।স্বপ্নটা দুজনের ভেঙ্গেছে। আকাশজুড়ে মেঘ ভাসে তার মানে এই নয় যে মেঘ আকাশের সম্পদ।নদীর জলকে তীব্র রোদের বাষ্পায়নের ক্ষমতা আর পাহাড়ের আঘাত সেই মেঘের পরিণত রূপান্তরকরণ।তাই শুধু আকাশে মেঘ ভাসাটা একা আকাশের সম্পদ নয়,তা অনেকের মিশ্রিত সম্পদ।সে যখন বর্ষা হয়ে নামে বা আকাশে ভেসে বেড়ায় তা হয় পৃথিবীর অলঙ্কার।মাতৃত্ব ছিল সেই অলঙ্কার তোমার আর আমার দুজনেরই।অতএব তুমি আমায় যে বিয়ে করার কথা বলছো তা অসম্ভবই খালি নয় অবান্তরও। জীবনে একটা পথ বন্ধ হয় আরও পথ খোলে।আমা সেই খোলা পথটা বোধহয় দেখে উঠতে পারছি না"।অনীতা এমন ব্যাখায় স্তব্ধ হয়। শুভেন্দুর ভাবনা অকৃত্রিম তা স্পষ্ট হয়।শুভেন্দুকে বড় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা হল তবে পারল না।উঠে এল তার পাশ থেকে।
এইসময়টা একটা মানসিক অস্থিরতার মধ্যে কাটে এমন কথা চিকিৎসকদের কাছ থেকে শুভেন্দু শুনে জনবসতি থেকে একটু দূরে যেতে চাইল।সে কর্মক্ষেত্রে কাজের মানুষ হিসাবে পরিচিত।অফিসের উচ্চপদস্থ সৌহানা ব্যানার্জী শুভেন্দুকে বেশ ভালোবাসে।ভালোবাসাটা শ্রদ্ধার পরিসরে বিস্তৃত।সৌহানার স্বামী নীলোৎপল বিজ্ঞানী। আমেরিকায় কর্মস্থ।সৌহানা এক ছেলের মা।সে শুভেন্দুর বিষয়ে সব জানে।আসলে মানুষটা মিশুকে তাই সব কথাই গল্পের খাতিরে সৌহানার কাছে বলেছিল।অনীতার জন্য ব্যথিত কারণ মায়েরা মেয়েদের অসুখ চেনে।শুভেন্দু দু'সপ্তাহের টানা ছুটি পেল। সৌহানা অনীতার প্রতি নজর রাখতে বলে অফিসটাকে ক'দিন ভুলতে বলল কারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ছাপ কর্মস্থলে স্পষ্টত দেখা যায়।অস্থির মনে কাজের গভীরতায় অন্তরায় হয়।তাই অনীতার যখন তাকে খুব প্রয়োজন সেই সময়টায় তাকে পাশে থাকতেই হবে।শুভেন্দু এখন নীরব দেওয়ালে পরিণত হয়েছে।
ওরা দুজনে লেপচাজগৎ ঘুরতে গিয়েছে।শিলিগুড়ি থেকে ঘুম হয়ে একটা পথ দার্জিলিং আরেকটা এই লেপচাজগতে এসে পড়েছে।এর আগে তিনবার শুভেন্দু দার্জিলিং এসেছে।প্রথমবার বাবা-মা,দ্বিতীয়বার কলেজের বন্ধুদের সাথে আর শেষবার হনিমুনে দার্জিলিং-সিকিম ট্যুর করেছিল।দার্জিলিং এখন ঘনবসতি অঞ্চল।তারচেয়ে লেপচাজগৎ একটু অফবিট জায়গা। মানুষজন কম থাকে।কটেজও হাতে গোনা।লেপচাজগৎ হয়ে ডাউহিল,ডেলো,রিষপ,কোলাখাম ঘুরে ওদের আসার কথা ফের শিলিগুড়ি নিউজলপাইগুড়ি হয়ে কলকাতা।এরমধ্যে ডেলো একটু বেশী জনবসতির হলেও বাকিগুলোয় জনবসতি কম।যাত্রাপথটাও একটু ঘুরপথে তবে যতটা জনঘনত্ব এড়ানো যায় ততই ভালো এই ভেবে অনীতার পাশে থাকে শুভেন্দু।লেপচাজগতে মেঘেদের বাস।এখানে শান্ত,শীতল পরিবেশ যেন সেই ক্ষতকে মিলিয়ে দিচ্ছে।পাহাড়িপথে যেতে যেতে অনীতা শুভেন্দুর কাঁধে মাথা রেখে বেশ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিল।একবার ড্রাইভারের চোখ এড়িয়ে শুভেন্দুর বুকে কামড়ও বসায় অনীতা।শুভেন্দু বোধহয় আঁচ করল স্ত্রীয়ের পরিবর্তিতত আচরণ।তবু উত্তরের জন্য হোটেল আসা অবধি অপেক্ষা করতে হল।যখন ওরা হোটেলের ঘরে এল অনীতা শুভেন্দুকে নখযুক্ত আঙ্গুল দিয়ে আঁকড়ে ধরে বলল, "বিশ্বাস করো, তোমায় ছেড়ে থাকতে আমি পারবো না।তোমার গায়ে মিশে থাকা একটা ক্ষীণ গন্ধ যা তোমার জামা,বুকে,গলায়,গালে মিশে আছে ওর নেশাটা যেন অস্থির মনে পাইনি শহরে থাকার সময়ে।বহুক্ষণ ধরে সেই গন্ধ আমার স্নায়বিক অবসাদ ঘুঁচিয়ে দিতে চাইলে আমিই যেন প্রতিরোধ গড়লাম।আজ পাহাড়ি নির্জনতার শ্যাওলামাখা পরিবেশে তোমার গায়ের সেই গন্ধ আমি একটুও চিনতে ভুল করিনি।আমার শরীরের রোম সেই গন্ধেই মাতোয়ারা হয়েছে।অবশেষে সেই গন্ধের জয় হল আর আমি হলাম পরাজিত।এবারে আমায় ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি শোনাও"।শুভেন্দু প্রেমের ভাষাগুলো চেনে।সে নিশ্চিত হল তার গন্তব্য ভুল নির্বাচিত হয়নি।এরপরে অনীতার শরীরে নিজের গায়ের গন্ধ সেদিন তো বটেই এরপরে যতদিন পাহাড়ি অঞ্চলে ছিল ততদিনই মাখিয়ে দিতে ভুল করেনি।মানসিক অবসাদ ঝেড়ে অনীতা এখন অনেকটা স্থির।ওরা একসাথে ছবির মত আঁকা পাহাড় দেখে।রাতে দূর থেকে অন্য পাহাড়ের গায়ে গজিয়ে ওঠা পাহাড়ি শহুরে সভ্যতার আলো জ্বলে ওঠা দেখে মনে হয় সুখ জোনাকির দল শহুরে ভিড় ছাড়িয়ে নিস্তব্ধ আস্তানায় বেড়ে উঠেছে বড় যত্নে।শুভেন্দুর কাঁধে মাথা রেখে অনীতা শোনে সুদূর থেকে ভেসে আসা পাহাড়ি নদীর শব্দ যার শব্দও ক্ষীণ।বহুক্ষণ ধরে শুনে সেই শব্দকেও তীব্র মনে হয়।ওরা মেঘেদের কথা ভেবে আবার ভালোবাসে যদি মেঘ ওদের চুম্বনে গা ভিজিয়ে এই পাহাড়েই আবার ঝরে পড়ে! ওরা ভালবাসে পুরাতন ভালবাসা ভুলে।পাহাড়ি ভালবাসায় শান্তি আছে।
শহরে ফিরলে এবারে অনীতা সুখবর পায়।শুভেন্দু বাবা হতে চলেছে।অনীতা ভাবী মা।এবারে পরীক্ষাগুলোয় আশাব্যঞ্জক বার্তাই দিয়েছেন চিকিৎক রাজমোহন ঘোষ।খুশীর আবহে গা ভিজেছে সবার।এই সন্তানের নাম রাখা হবে পাহাড়ের নামে সে নদী বা পর্বত যে কারও সাথে সামঞ্জস্য রেখেই হোক।একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে যেখানে জীবনের সবকিছু সেখানে সুউচ্চ নীরবতা তা ফিরিয়ে দিতে পারে এইকথাই জীবনের অঙ্গে ভরিয়ে রাখবে ওরা।সাড়ে ন'মাস পরে অনীতা জন্ম দিয়েছে এক মেয়ের নাম রেখেছে মেঘমা।পাহাড়ি রূপকথাকে সত্যি কাহিনী করে অদৃষ্ট এক রূপকার ওদের মনকে বেঁধে দিল প্রজন্মের নবীকরণে।এভাবেই মন ভাল থাকে,গায়ের গন্ধে সে মিশে থাকে নিঃস্বার্থে ভালবেসে।
ads banner
Share the content if you like it.


ads banner

Bangla eDaily to resume soon