শিবব্রত গুহ
কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিকেরা হলেন দেশ ও জাতির
মেরুদণ্ড। তাঁরা ভবিষ্যতকে দেখতে পান।
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের এক নামকরা কবি হলেন
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন। তিনি থাকেন হাওড়া জেলার
সোনাতলা গ্রামে।
মানুষ হিসাবে তাঁর কোন তুলনাই হয় না।
তাঁর সংসার একদম সাজানো গোছানো। তিনি
খুবই কোমল হৃদয়ের মানুষ। তাঁর হাসি একদম
অপূর্ব। তিনি একজন সহজ - সরল মানুষ।
অতি সহজেই তিনি মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলেন।
অনেক মানুষই তাঁর সেই সহজ সরল বিশ্বাসের
সুযোগ নিয়ে তাঁর কোমল হৃদয়কে করেছে ক্ষতবিক্ষত।
তবুও, তিনি এখনো মানুষকে বিশ্বাস করেন। তিনি
বিশ্বাস করেন মানবতায়। তিনি হলেন একজন
মানবতাবাদী। তিনি অনেক দিন ধরেই করে যাচ্ছেন
সাহিত্য চর্চা। তাঁর সাহিত্য সম্ভার দেখবার মতো।
তিনি সারাজীবন ধরে শুধু কবিতাই লিখেছেন প্রায়
১৫ হাজার। অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন এই মানুষটিকে
অনেকেই হিংসা করে। তার কারণ এখনো অজানা।
তাঁর একটা বড় গুণ হল, তিনি খুব পরোপকারী
মানুষ।
তিনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার এক বিশেষ কাজে,
তিনি একদিন উলুবেড়িয়া গেছেন। কাজ শেষ করে,
তিনি ট্রেন ধরবেন বলে টিকিট কেটে উলুবেড়িয়া
স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। সেদিনটা ছিল মঙ্গল
বার।
সময়টা শীতকাল। ঘড়িতে বাজে সন্ধ্যা সাতটা।
উলুবেড়িয়া স্টেশনে বেশি লোক নেই তখন।
ওই মোটামুটি জনা বিশ লোক হবে। সত্যেন্দ্রনাথ পাইন উলুবেড়িয়া স্টেশনে যেখানে দাঁড়িয়েছেন,
ঠিক তার দশ হাত দূরে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটাকে দেখে মনে হয়, সে মুসলিম। বয়স তার
বেশি হবে না। বোধহয় কলেজে পড়ে। দেখতে শুনতে
সে খুব ভালো। তার পরনে একটা সালোয়ার কামিজ।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে খুব চঞ্চল হয়ে উঠেছে।
সে বারবার তার লেডিজ হাতঘড়িটা দেখছে।
মেয়েটা বার কয়েক তাঁর দিকে কিরকম অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকালো! কি জানি কে জানে! এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল। সত্যেন্দ্রনাথ পাইন মনে মনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এক স্বর্ণযুগের গানের দুকলি
গাইতে গাইতে তাতে মগ্ন হয়ে গেলেন।
আসলে, তিনি মানুষটাই এমন আত্মভোলা প্রকৃতির।
হঠাৎ করে, তাঁর চমক ভাঙলো এক নারীর চিৎকারে।
" ছাড় , ছাড় আমায়, অসভ্যতা করার আর জায়গা পাস নি, আমার হাতটা ছাড় বলছি। "
- একথা রেগে বলে সেই মেয়েটি।
" বাহ, সুইটি, তোমার তো বেশ রাগ আছে। রাগলে
না তোমাকে মাইরি দারুণ লাগে। তুমি তো আমার
জানেমন, তোমার জন্য আমার জান হাজির। "
- হেসে বললো, একটা বখাটে ছেলে, তার নাম সেলিম, পুরো নাম সেলিম খান। সে একটা এই
এলাকার কুখ্যাত মস্তান।
এই সেলিম হেন খারাপ কাজ নেই, যা করে না।
খুন, তোলাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ - সব কাজেই সে
একদম ওস্তাদ। তার কাছে সবসময় রিভলভার, ছুরি
থাকে। সে যে কত মানুষকে খুন করেছে, তার ঠিক নেই। সুন্দরী মেয়েদের প্রতি তার এক বিশেষ দুর্বলতা আছে।
এই অঞ্চলে সেলিম ও তার দলবলের দাপট মারাত্মক। কেউ তাদের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে পারে না। যদি কেউ সাহস করে, এই দুঃসাহস
দেখায়, তার পক্ষে আর বেঁচে থাকা খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশ - প্রশাসন কেউই সেলিম ও তার
দলবলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।
যে মেয়েটার হাত সেলিম ধরেছে, তার নাম হল মেহেরজান খাতুন। সে থাকে হাওড়ারই বাগনানে।
সে উলুবেড়িয়া কলেজে ইতিহাসে অনার্স
নিয়ে, পড়াশোনা করে। লেখাপড়ায় সে খুব মেধাবী।
তার আব্বা নেই। তার আব্বার নাম ছিল গোলাম
আলী। তার বয়স যখন খুব ছোট, তখন এক
কঠিন ব্যারামে তার আব্বা মারা যায়। তারপর থেকে,
অনেক অনেক কষ্ট করে তার আম্মী সুজানা
তাকে বড় করে তুলেছেন।
এই সেলিম অনেক দিন ধরেই তার পেছনে লেগেছে।
সে নাকি তাকে মোহব্বত করে! তাকে শাদী করে
ঘরে নিয়ে যাবে। যতসব বদমাইশ! মেহেরজান
সেলিমকে একদম পছন্দ করে না। তার একটাই
লক্ষ্য, জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া। তার আম্মীর
কষ্ট দূর করা।
সেলিমকে সে অনেক বার বুঝিয়েছে, কিন্তু,
শয়তানটা তার কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। সে এসব
কথা তার আম্মীকে কিছুই বলেনি। বললে আম্মী
তাকে নিয়ে আরো চিন্তা করবে। তা সে চায় না।
সে উলুবেড়িয়া কলেজের প্রিন্সিপালকে এব্যাপারে সব জানিয়েছে। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আজ কলেজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। যার জন্য
তার দেরি হয়ে যায়। তারপর এই ঘটনা। আশ্চর্যের বিষয়, এই যে, সবার সামনে, এই ঘটনা ঘটছে দেখেও, কেউ কোন প্রতিবাদ করছে না। এসব দেখে সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের বিরক্তি এসে গেল। এরা কি সব
মানুষ! এরই নাম কি সভ্য সমাজ! যেখানে সবার সামনে এক নারীর সন্মান হানি করছে আটজন
দুর্বৃত্ত।
আর সবাই তা চোখ মেলে দেখছে। এদের কি আদৌ
মানুষ বলা যায়? যায় কি? এদের কি মেরুদণ্ড আছে? না নেই? আজ যেটা এই মেয়েটার সাথে ঘটছে, কাল ঠিক সেই ঘটনা যে এদের মধ্যে থাকা
কারো পরিবারের মেয়েদের সাথে ঘটবে না অন্য
কোথাও, তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? আছে কি?
না, এভাবে কাপুরুষের মতো কোন নারীর সন্মানহানি
সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের পক্ষে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা
সম্ভব হবে না, কিছুতেই না। সেই শিক্ষা সে পায়নি তাঁর বাবা - মায়ের কাছ থেকে। তাঁর বাবা - মা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিয়েছেন অন্যায়কে নির্বলের
মতো সহ্য না করে, সবলের মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সজোরে প্রতিবাদ করার।
সে তাই করবে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ সে মেরুদণ্ড সোজা রেখে করবে, করবে, অবশ্যই করবে।
মনে পড়ে যায় তাঁর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত সেই কবিতার লাইনগুলো ঃ
" চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর "
কি অসাধারণ কবিতা! কি অনবদ্য এই কবিতার লাইন গুলো! মনটা তাঁর অসীম শক্তিতে ভরে উঠলো। ভয় কাকে বলে? তা সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
জানে না। সে পিতামাতার আশীর্বাদে ভয়কে করেছে
জয়। সে হল প্রকৃত বীরপুরুষ। সে একাই এগিয়ে
গেল মেয়েটিকে উদ্ধার করার জন্য।
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন বজ্রকন্ঠে সেলিমকে উদ্দেশ্য
করে বললেন, " এই ছেলে, ওর হাতটা ছেড়ে দাও,
দাও ছেড়ে। "
সেলিম অবাক হয়ে বলে, " এই বুড়ো ভাম, আমার নাম সেলিম খান, আমি এই এলাকার ডন। তুই কাকে
কি বলছিস জানিস? আমাকে এই তল্লাটে সবাই ভয় করে। "
কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিকেরা হলেন দেশ ও জাতির
মেরুদণ্ড। তাঁরা ভবিষ্যতকে দেখতে পান।
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের এক নামকরা কবি হলেন
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন। তিনি থাকেন হাওড়া জেলার
সোনাতলা গ্রামে।
মানুষ হিসাবে তাঁর কোন তুলনাই হয় না।
তাঁর সংসার একদম সাজানো গোছানো। তিনি
খুবই কোমল হৃদয়ের মানুষ। তাঁর হাসি একদম
অপূর্ব। তিনি একজন সহজ - সরল মানুষ।
অতি সহজেই তিনি মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলেন।
অনেক মানুষই তাঁর সেই সহজ সরল বিশ্বাসের
সুযোগ নিয়ে তাঁর কোমল হৃদয়কে করেছে ক্ষতবিক্ষত।
তবুও, তিনি এখনো মানুষকে বিশ্বাস করেন। তিনি
বিশ্বাস করেন মানবতায়। তিনি হলেন একজন
মানবতাবাদী। তিনি অনেক দিন ধরেই করে যাচ্ছেন
সাহিত্য চর্চা। তাঁর সাহিত্য সম্ভার দেখবার মতো।
তিনি সারাজীবন ধরে শুধু কবিতাই লিখেছেন প্রায়
১৫ হাজার। অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন এই মানুষটিকে
অনেকেই হিংসা করে। তার কারণ এখনো অজানা।
তাঁর একটা বড় গুণ হল, তিনি খুব পরোপকারী
মানুষ।
তিনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার এক বিশেষ কাজে,
তিনি একদিন উলুবেড়িয়া গেছেন। কাজ শেষ করে,
তিনি ট্রেন ধরবেন বলে টিকিট কেটে উলুবেড়িয়া
স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। সেদিনটা ছিল মঙ্গল
বার।
সময়টা শীতকাল। ঘড়িতে বাজে সন্ধ্যা সাতটা।
উলুবেড়িয়া স্টেশনে বেশি লোক নেই তখন।
ওই মোটামুটি জনা বিশ লোক হবে। সত্যেন্দ্রনাথ পাইন উলুবেড়িয়া স্টেশনে যেখানে দাঁড়িয়েছেন,
ঠিক তার দশ হাত দূরে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটাকে দেখে মনে হয়, সে মুসলিম। বয়স তার
বেশি হবে না। বোধহয় কলেজে পড়ে। দেখতে শুনতে
সে খুব ভালো। তার পরনে একটা সালোয়ার কামিজ।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে খুব চঞ্চল হয়ে উঠেছে।
সে বারবার তার লেডিজ হাতঘড়িটা দেখছে।
মেয়েটা বার কয়েক তাঁর দিকে কিরকম অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকালো! কি জানি কে জানে! এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল। সত্যেন্দ্রনাথ পাইন মনে মনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এক স্বর্ণযুগের গানের দুকলি
গাইতে গাইতে তাতে মগ্ন হয়ে গেলেন।
আসলে, তিনি মানুষটাই এমন আত্মভোলা প্রকৃতির।
হঠাৎ করে, তাঁর চমক ভাঙলো এক নারীর চিৎকারে।
" ছাড় , ছাড় আমায়, অসভ্যতা করার আর জায়গা পাস নি, আমার হাতটা ছাড় বলছি। "
- একথা রেগে বলে সেই মেয়েটি।
" বাহ, সুইটি, তোমার তো বেশ রাগ আছে। রাগলে
না তোমাকে মাইরি দারুণ লাগে। তুমি তো আমার
জানেমন, তোমার জন্য আমার জান হাজির। "
- হেসে বললো, একটা বখাটে ছেলে, তার নাম সেলিম, পুরো নাম সেলিম খান। সে একটা এই
এলাকার কুখ্যাত মস্তান।
এই সেলিম হেন খারাপ কাজ নেই, যা করে না।
খুন, তোলাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ - সব কাজেই সে
একদম ওস্তাদ। তার কাছে সবসময় রিভলভার, ছুরি
থাকে। সে যে কত মানুষকে খুন করেছে, তার ঠিক নেই। সুন্দরী মেয়েদের প্রতি তার এক বিশেষ দুর্বলতা আছে।
এই অঞ্চলে সেলিম ও তার দলবলের দাপট মারাত্মক। কেউ তাদের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে পারে না। যদি কেউ সাহস করে, এই দুঃসাহস
দেখায়, তার পক্ষে আর বেঁচে থাকা খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশ - প্রশাসন কেউই সেলিম ও তার
দলবলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।
যে মেয়েটার হাত সেলিম ধরেছে, তার নাম হল মেহেরজান খাতুন। সে থাকে হাওড়ারই বাগনানে।
সে উলুবেড়িয়া কলেজে ইতিহাসে অনার্স
নিয়ে, পড়াশোনা করে। লেখাপড়ায় সে খুব মেধাবী।
তার আব্বা নেই। তার আব্বার নাম ছিল গোলাম
আলী। তার বয়স যখন খুব ছোট, তখন এক
কঠিন ব্যারামে তার আব্বা মারা যায়। তারপর থেকে,
অনেক অনেক কষ্ট করে তার আম্মী সুজানা
তাকে বড় করে তুলেছেন।
এই সেলিম অনেক দিন ধরেই তার পেছনে লেগেছে।
সে নাকি তাকে মোহব্বত করে! তাকে শাদী করে
ঘরে নিয়ে যাবে। যতসব বদমাইশ! মেহেরজান
সেলিমকে একদম পছন্দ করে না। তার একটাই
লক্ষ্য, জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া। তার আম্মীর
কষ্ট দূর করা।
সেলিমকে সে অনেক বার বুঝিয়েছে, কিন্তু,
শয়তানটা তার কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। সে এসব
কথা তার আম্মীকে কিছুই বলেনি। বললে আম্মী
তাকে নিয়ে আরো চিন্তা করবে। তা সে চায় না।
সে উলুবেড়িয়া কলেজের প্রিন্সিপালকে এব্যাপারে সব জানিয়েছে। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আজ কলেজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। যার জন্য
তার দেরি হয়ে যায়। তারপর এই ঘটনা। আশ্চর্যের বিষয়, এই যে, সবার সামনে, এই ঘটনা ঘটছে দেখেও, কেউ কোন প্রতিবাদ করছে না। এসব দেখে সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের বিরক্তি এসে গেল। এরা কি সব
মানুষ! এরই নাম কি সভ্য সমাজ! যেখানে সবার সামনে এক নারীর সন্মান হানি করছে আটজন
দুর্বৃত্ত।
আর সবাই তা চোখ মেলে দেখছে। এদের কি আদৌ
মানুষ বলা যায়? যায় কি? এদের কি মেরুদণ্ড আছে? না নেই? আজ যেটা এই মেয়েটার সাথে ঘটছে, কাল ঠিক সেই ঘটনা যে এদের মধ্যে থাকা
কারো পরিবারের মেয়েদের সাথে ঘটবে না অন্য
কোথাও, তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? আছে কি?
না, এভাবে কাপুরুষের মতো কোন নারীর সন্মানহানি
সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের পক্ষে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা
সম্ভব হবে না, কিছুতেই না। সেই শিক্ষা সে পায়নি তাঁর বাবা - মায়ের কাছ থেকে। তাঁর বাবা - মা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিয়েছেন অন্যায়কে নির্বলের
মতো সহ্য না করে, সবলের মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সজোরে প্রতিবাদ করার।
সে তাই করবে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ সে মেরুদণ্ড সোজা রেখে করবে, করবে, অবশ্যই করবে।
মনে পড়ে যায় তাঁর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত সেই কবিতার লাইনগুলো ঃ
" চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর "
কি অসাধারণ কবিতা! কি অনবদ্য এই কবিতার লাইন গুলো! মনটা তাঁর অসীম শক্তিতে ভরে উঠলো। ভয় কাকে বলে? তা সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
জানে না। সে পিতামাতার আশীর্বাদে ভয়কে করেছে
জয়। সে হল প্রকৃত বীরপুরুষ। সে একাই এগিয়ে
গেল মেয়েটিকে উদ্ধার করার জন্য।
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন বজ্রকন্ঠে সেলিমকে উদ্দেশ্য
করে বললেন, " এই ছেলে, ওর হাতটা ছেড়ে দাও,
দাও ছেড়ে। "
সেলিম অবাক হয়ে বলে, " এই বুড়ো ভাম, আমার নাম সেলিম খান, আমি এই এলাকার ডন। তুই কাকে
কি বলছিস জানিস? আমাকে এই তল্লাটে সবাই ভয় করে। "
" তাতে কি হয়েছে? আমি তোকে ভয় করি না। এই নারীর সাথে তুমি অসভ্যতামি কেন করছো? ওকে ছেড়ে দাও। আর এখান থেকে চলে যাও। ওর
সাথে কোন অসভ্যতামি আর করবে না। নারীদের
প্রতি কোন অসন্মান আমি সহ্য করতে পারবো না।
নারী জাতিকে আমি খুব শ্রদ্ধা ও সন্মান করে
থাকি। " - আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো
বললেন সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
" এই ব্যাটা, তোর জীবনের ভয় নেই। তুই জেনে-বুঝে
মৃত্যুকে ডেকে আনছিস। সেলিম ভাই খুব রাগী।
একবার রেগে গেলে, সেই রাগ সহজে থামানো যায় না। মানে মানে, এখান থেকে কেটে পড়। নইলে... "
- সেলিমের এক চ্যালা আসলাম এই বলে
শাঁসালো সত্যেন্দ্রনাথ পাইনকে।
" সত্যেন্দ্রনাথ পাইন ভয় পায় না। তোদের যা বলছি তাই কর, নইলে.... " - চেঁচিয়ে বললেন সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
" আরে, বুড়োটার মাথায় ছিট আছে নাকি? এই মেয়েটা তোর কে হয়? " - বিস্ময়ের সাথে বলে সেলিম।
" এই, ব্যাটা তুই কাকে বুড়ো বলছিস। তুই জানিস আমি কে? আমার নাম সত্যেন্দ্রনাথ পাইন। আমি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিখ্যাত কবি,
লেখক ও প্রাবন্ধিক। এটা আমার একটা পরিচয়।
আমার অন্য একটা পরিচয় এবার আমি তোদের
দিই। আমি একজন ক্যারাটে ব্ল্যাকবেল্ট। এছাড়া আমি কুংফু ও কুস্তিও জানি। আমার বয়স এখন
৭০ বছর হলেও, আমি এই বুড়ো হাড়ে এখনো
ভেল্কি দেখাতে পারি। কিরে বদমাইশের দল,
দেখবি নাকি সেই ভেল্কি? "
- একনাগাড়ে কথাগুলো বললেন সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
" ও, তাই নাকি! ঠিক আছে, তাহলে এবার পরীক্ষা
করে দেখা যাক, এই তোরা বুড়োকে আচ্ছা করে
ধোলাই দে তো, ওর হাড়গোড় সব ভেঙে দিবি,
বুড়ো ব্যাটা জানে না, সেলিমের কাজে বাধা দিলে
তার শাস্তি কত ভয়ংকর হয়! " - রাগের মাথায় বলে সেলিম।
তারপর, আবার সেলিম বলে ওঠে, " এই তোরা,
বুড়ো ভামটাকে উচিত শিক্ষা দে এখনই। "
- এদিকে সত্যেন্দ্রনাথ পাইন দুর্বৃত্তদের শাস্তি দেওয়ার
জন্য তৈরি হতে লাগলো। সে পরনের হলুদ রঙের পাঞ্জাবীটার দুহাতের হাতা গুটিয়ে নিল। হাতের দামী
হাতঘড়িটা খুলে, পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো।
তারপর, তাঁর পরনের সাদা রঙের ধুতিটা লুঙ্গির
মতো করে, পরে নিল। এদিকে, সেলিমের সাতজন
চেলারা, সেলিমের নির্দেশ পেয়ে হাতে অস্ত্রশস্ত্র
নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের দিকে তেড়ে গেল।
তারা তো এই আদেশ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
এই বুড়োটা বড্ড বাড় বেড়েছে, আজ ওর সব
অবস্থা খারাপ করে দেব আমরা। ব্যাটার খুব
সাহস। সব সাহস ওর আজ ভেঙে গুড়িয়ে দেব।
তারপর, যা ঘটলো, তা যে কল্পনাকেও হার মানিয়ে দেয়। সত্যেন্দ্রনাথ পাইন যে এত দুর্ধর্ষ লড়াই করতে
পারে, এই ৭০ বছর বয়সেও, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি।
এযে অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু, এই পৃথিবীতে অসম্ভবকে সম্ভব করার নাম হল সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
তাঁর প্রতিভা বহুমুখী। তাঁকে বলা যেতে পারে,
বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সে যে হাত দিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করে, সেই হাত দিয়েই, সে সেলিমের
সাতজন চেলাকে মেরে মাটিতে শুইয়ে দিল। তারা
এই প্রত্যাঘাতের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না।
সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের হাতে প্রচন্ড মার খেয়ে তারা সবাই মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। অনেকে আবার অজ্ঞান হয়ে গেল। কারু কারু মুখ দিয়ে
গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। কেউ কেউ
যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো।
এসব দেখে সেলিম পুরো ভয় পেয়ে গেল। সে কোমর থেকে রিভলভার বের করে যেই না সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের দিকে তাক করেছে, অমনি সিনেমার
হিরোদের মতো, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন, সজোরে
এক লাথি মারল, সেলিমের রিভলভার তাক করা
হাতে। রিভলভারটা ছিটকে পড়ে গেল রেললাইনে।
তারপর, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন কি প্রচন্ড প্রহার করলো
সেলিমকে!, তা ভাষায় যাবে না প্রকাশ করা!
মার খেয়ে, সেলিম রক্তবমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেল।
উলুবেড়িয়া স্টেশনে উপস্থিত সব মানুষ ও মেহেরজান প্রথমে তো বুঝতেই পারেনি, যে,
এ কি ঘটছে! এ কি সত্যি! না কল্পনা! এও কি
সম্ভব! যা পুলিশ - প্রশাসন করতে পারলো না,
এতদিন ধরে, তা শেষ পর্যন্ত করে দেখালো বাস্তবে
একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
ঘোর কাটতে একটু সময় লাগলো। তারপর, হাততালি ও প্রশংসায় সবাই ভরিয়ে দিল
সতেন্দ্রনাথ পাইনকে। শেষে, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
বাগনানে, মেহেরজানকে তার আম্মীর কাছে নিরাপদে
পৌঁছে দিল। মেহেরজান ও তার আম্মী সারাজীবনের
মতো সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের কাছে ঋণী হয়ে গেল।
ধন্য সত্যেন্দ্রনাথ পাইন, ধন্য তোমার নারীজাতির প্রতি
অকুন্ঠ শ্রদ্ধা, ধন্য তোমার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।
তুমি হলে, দেশ, জাতি ও সমাজের গৌরব, গৌরব,
হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই গৌরব।
সাথে কোন অসভ্যতামি আর করবে না। নারীদের
প্রতি কোন অসন্মান আমি সহ্য করতে পারবো না।
নারী জাতিকে আমি খুব শ্রদ্ধা ও সন্মান করে
থাকি। " - আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো
বললেন সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
" এই ব্যাটা, তোর জীবনের ভয় নেই। তুই জেনে-বুঝে
মৃত্যুকে ডেকে আনছিস। সেলিম ভাই খুব রাগী।
একবার রেগে গেলে, সেই রাগ সহজে থামানো যায় না। মানে মানে, এখান থেকে কেটে পড়। নইলে... "
- সেলিমের এক চ্যালা আসলাম এই বলে
শাঁসালো সত্যেন্দ্রনাথ পাইনকে।
" সত্যেন্দ্রনাথ পাইন ভয় পায় না। তোদের যা বলছি তাই কর, নইলে.... " - চেঁচিয়ে বললেন সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
" আরে, বুড়োটার মাথায় ছিট আছে নাকি? এই মেয়েটা তোর কে হয়? " - বিস্ময়ের সাথে বলে সেলিম।
" এই, ব্যাটা তুই কাকে বুড়ো বলছিস। তুই জানিস আমি কে? আমার নাম সত্যেন্দ্রনাথ পাইন। আমি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিখ্যাত কবি,
লেখক ও প্রাবন্ধিক। এটা আমার একটা পরিচয়।
আমার অন্য একটা পরিচয় এবার আমি তোদের
দিই। আমি একজন ক্যারাটে ব্ল্যাকবেল্ট। এছাড়া আমি কুংফু ও কুস্তিও জানি। আমার বয়স এখন
৭০ বছর হলেও, আমি এই বুড়ো হাড়ে এখনো
ভেল্কি দেখাতে পারি। কিরে বদমাইশের দল,
দেখবি নাকি সেই ভেল্কি? "
- একনাগাড়ে কথাগুলো বললেন সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
" ও, তাই নাকি! ঠিক আছে, তাহলে এবার পরীক্ষা
করে দেখা যাক, এই তোরা বুড়োকে আচ্ছা করে
ধোলাই দে তো, ওর হাড়গোড় সব ভেঙে দিবি,
বুড়ো ব্যাটা জানে না, সেলিমের কাজে বাধা দিলে
তার শাস্তি কত ভয়ংকর হয়! " - রাগের মাথায় বলে সেলিম।
তারপর, আবার সেলিম বলে ওঠে, " এই তোরা,
বুড়ো ভামটাকে উচিত শিক্ষা দে এখনই। "
- এদিকে সত্যেন্দ্রনাথ পাইন দুর্বৃত্তদের শাস্তি দেওয়ার
জন্য তৈরি হতে লাগলো। সে পরনের হলুদ রঙের পাঞ্জাবীটার দুহাতের হাতা গুটিয়ে নিল। হাতের দামী
হাতঘড়িটা খুলে, পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো।
তারপর, তাঁর পরনের সাদা রঙের ধুতিটা লুঙ্গির
মতো করে, পরে নিল। এদিকে, সেলিমের সাতজন
চেলারা, সেলিমের নির্দেশ পেয়ে হাতে অস্ত্রশস্ত্র
নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের দিকে তেড়ে গেল।
তারা তো এই আদেশ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
এই বুড়োটা বড্ড বাড় বেড়েছে, আজ ওর সব
অবস্থা খারাপ করে দেব আমরা। ব্যাটার খুব
সাহস। সব সাহস ওর আজ ভেঙে গুড়িয়ে দেব।
তারপর, যা ঘটলো, তা যে কল্পনাকেও হার মানিয়ে দেয়। সত্যেন্দ্রনাথ পাইন যে এত দুর্ধর্ষ লড়াই করতে
পারে, এই ৭০ বছর বয়সেও, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি।
এযে অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু, এই পৃথিবীতে অসম্ভবকে সম্ভব করার নাম হল সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
তাঁর প্রতিভা বহুমুখী। তাঁকে বলা যেতে পারে,
বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সে যে হাত দিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করে, সেই হাত দিয়েই, সে সেলিমের
সাতজন চেলাকে মেরে মাটিতে শুইয়ে দিল। তারা
এই প্রত্যাঘাতের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না।
সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের হাতে প্রচন্ড মার খেয়ে তারা সবাই মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। অনেকে আবার অজ্ঞান হয়ে গেল। কারু কারু মুখ দিয়ে
গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। কেউ কেউ
যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো।
এসব দেখে সেলিম পুরো ভয় পেয়ে গেল। সে কোমর থেকে রিভলভার বের করে যেই না সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের দিকে তাক করেছে, অমনি সিনেমার
হিরোদের মতো, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন, সজোরে
এক লাথি মারল, সেলিমের রিভলভার তাক করা
হাতে। রিভলভারটা ছিটকে পড়ে গেল রেললাইনে।
তারপর, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন কি প্রচন্ড প্রহার করলো
সেলিমকে!, তা ভাষায় যাবে না প্রকাশ করা!
মার খেয়ে, সেলিম রক্তবমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেল।
উলুবেড়িয়া স্টেশনে উপস্থিত সব মানুষ ও মেহেরজান প্রথমে তো বুঝতেই পারেনি, যে,
এ কি ঘটছে! এ কি সত্যি! না কল্পনা! এও কি
সম্ভব! যা পুলিশ - প্রশাসন করতে পারলো না,
এতদিন ধরে, তা শেষ পর্যন্ত করে দেখালো বাস্তবে
একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ সত্যেন্দ্রনাথ পাইন।
ঘোর কাটতে একটু সময় লাগলো। তারপর, হাততালি ও প্রশংসায় সবাই ভরিয়ে দিল
সতেন্দ্রনাথ পাইনকে। শেষে, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
বাগনানে, মেহেরজানকে তার আম্মীর কাছে নিরাপদে
পৌঁছে দিল। মেহেরজান ও তার আম্মী সারাজীবনের
মতো সত্যেন্দ্রনাথ পাইনের কাছে ঋণী হয়ে গেল।
ধন্য সত্যেন্দ্রনাথ পাইন, ধন্য তোমার নারীজাতির প্রতি
অকুন্ঠ শ্রদ্ধা, ধন্য তোমার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।
তুমি হলে, দেশ, জাতি ও সমাজের গৌরব, গৌরব,
হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই গৌরব।