Select language to read news in your own language


গল্পটি পড়ুন এবং আপনার লেখা গল্প Upload করে অন্যকে পড়ান। SatSakal Facebook Page টি লাইক করে সঙ্গে থাকুন।


তাল পাখার ভালবাসা



শাহানাজ পারভীন শিউলী 

দরজায় কড়া নাড়লো মিতা।সাথে ঝর্ণা আর রুবি। কী রে, কী হলো তোর! দরজাটা খোল। দরজা খুলতেই ওদের চোখ ছানাবড়া। রুবী আবেগী হয়ে বলল,এই মিনা, তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না।বাব্বা, কী অপরূপ লাগছে তোকে! যেন অপসারী। 
মিতা গেয়ে উঠলো, অপরূপা তুমি বড় অপরূপা। মিনু অভিমানী সুরে বলল,কী হচ্ছে কী এসব! ভাল হচ্ছে না কিন্তু। খুব ফাজলামি করছিস তোরা।
সত্যিই অপরূপ লাগছিলো মিনুকে।সাদা শাড়ি লাল পাড়, তার সাথে টকটকে লাল ব্লাউজ, হাতে লাল রেশমী চুড়ি,আলতা মাখা পা,হালকা মেকাপ করেছে খোঁপায় বেলীফুলের মালা,আর কপালে লাল টিপ।লাল টিপটা কপালের উপর জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।মনে হচ্ছে নববর্ষের উদিত নব সূর্য। সব মিলে মিনুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।বৈশাখী সাজে সেজেছে ওরা। মিনুর কাকে কলস,রুবীর হাতে কুলা,মিতার হাতে সিঁকার ভিতর একটা হাঁড়ি আর ঝর্ণার হাতে ছোট্ট ডালা।  হরেক রকম ফুল দিয়ে সাজানো।মনে হচ্ছে এক ঝাঁক ফুলপরী। ওরা এক সঙ্গে বেরিয়ে পড়লো কলেজের উদ্দেশ্যে।

কলেজে পৌঁছে ওরা আরো হত হতভম্ব  হয়ে গেলো। ও মা এ কী।ছেলেরাও বৈশাখী সাজে সেজেছে। কেউ চাষী,কেউ জেলে,কেউ কুমোর। দুইজন আবার পালকী কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কেউ কেউ আবার পাঞ্জাবি পাজামা পরে এসেছে। কেউ কেউ বউ -বর  সেজেছে।।কলেজের পুরা মাঠটা জমজমাট। খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পান্তা ইলিশ,সাথে আলুভর্তা,ঘোটা ডাল, লঙ্কা ও পিঁয়াজ।  কলেজের একপাশে ছোট্ট ছোট্ট পিঠাপুলির দোকান। রুবী দৌড়ে এসে বলল, এই দ্যাখ দ্যাখ সাজ্জাদ কে কী সুন্দর লাগছে! লাল খয়েরি পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পরেছে।পাঞ্জাবিতে ঢাক-ঢোলের ছবি আঁকা। কপাল ঢাকা বৈশাখের ফেস্টুন দিয়ে।মিনু তাকাতেই সাজ্জাদের চোখে চোখ পড়লো। সাজ্জাদ ও অপলক দৃষ্টিতে মিনুকে দেখছিল।মিনু আস্তে আস্তে চোখটা নামিয়ে নিয়ে দ্রুত ওখান থেকে সরে দাঁড়ালো 
সাজ্জাদ ও মিনুর বাড়ী একই গ্রামে।দু,জন  একই কলেজে পড়ে।তবে সাবজেক্ট আলাদা।সাজ্জাদ ফোর্থ ইয়ারে। মিনু অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। সেই মাধ্যমিক থেকেই সে মিনুকে ভালবাসে। মিনুও তাকে পছন্দ করে কিন্তুু এত বছর পরও কেউ কাউকে বলতে পারিনি। আর না বলার কারণও ছিলো। সাজ্জাদ ও মিনুর পরিবারের মধ্যে বিশাল দ্বন্দ্ব চলে আসছে অনেক বছর ধরে।জমি নিয়ে তাদের গলোযোগ।এই কারনে ভয়ে কেউ কাউকে বলতে পারিনি। একবার সাজ্জাদ মেলা থেকে একটা পুতুল কিনে দিয়েছিল মিনুকে।মিনুর বাবা জানতে পেরে মিনুকে থাপ্পড় মেরেছিল। সেই থেকে সাজ্জাদকে দেখলে মিনু মাথা নীচু করে চলে যায়। সাজ্জাদও কিছু বলেনা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে।এইবার সে মিনুকে দু'চোখ ভরে দেখলো। মিনুও গোপনে গোপনে সাজ্জাদকে প্রাণ ভরে দেখলো।যাতে ওকে কেউ না দেখতে পারে।
সাজ্জাদকে দেখার পর মিনুর বুকের ভিতর ঝড় বয়ে গেলো।কোনো কিছুতেই স্থির থাকতে পারলো না।। 
সাজ্জাদেরও একই অবস্থা। কী করবে ভেবে উঠতে পারছিলো না।একবার সাজ্জাদ ভাবলো, চেয়ারম্যান ও মেম্বার চাচাদের দিয়ে গণ্ডগোলটা মিটিয়ে নেবে কিন্তু শত চেষ্টা করেও মিনুর বাবাকে সোজা করা গেলো না।সে একই রকম থেকে গেলো।

এদিকে মিনুর বাবা মিনুর বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করলো।সাজ্জাদ গ্রামের লোক ধরে বিয়েটা বন্ধ করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। বড় ঘর থেকে দেখতে আসাই মিনুর বাবা আর পিছপা  হলোনা।ছেলে সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর না নিয়ে তড়িঘড়ি বিয়ে ঠিক করলো।সাজ্জাদ অঝোরে কাঁদতে থাকে। সে মেলা থেকে একটা ভাঁজ করা তাল পাখা কিনে এনেছিলো মিনুর জন্য। পাখার প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে সে না বলার কথা গুলো  লিখে পাঠাই। অতি গোপনে মিনুর কাছে পৌঁছে দেই।পাখাটা পেয়ে মিনু গভীর রাতে চুরি করে পড়তে থাকে।তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে নোনো জল পড়তে থাকে। সে জল কিছুতেই নিবৃত্তি করতে পারেনা। মিনু বুকের সাথে পাখাটা চেপে ধরে কেঁদে বলে, আমিও যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি সাজ্জাদ ভাই।কিম্তু আমার করার কিছু নেই।আমার হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা,এই বলে মিনু কাঁদতে থাকে। সে পাখাটা অতি গোপনীয় জায়গায় লুকিয়ে রাখে।

খুব ধুমধামের সাথে মিনুর বিয়ে হয়ে যায় বাবার দেখা পাত্রের সাথে।মিনুকে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসে ছেলে পক্ষ। মিনু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।বার বার সাজ্জাদের মুখখানা ভাসতে থাকে তার চোখে। মিনুকে নিয়ে এসে বর কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। তারপর অনেক রাত্রে বাড়ী ফেরে। খুবই মনোগ্রাহী করে সাজানো হয়েছে মিনুর বাসর।মিনুর বর ঘরে ঢুকতেই মুখ থেকে একটা গন্ধ আসে।মিনু আৎকে ওঠে।মিনুর বুঝতে আর কিছুই বাকী থাকেনা।
 কিছুদিন যেতে না যেতেই ওদের ভিতর ঝগড়া শুরু হয়।মাঝে মাঝে তার স্বামী রাত্রে বাড়ী ফেরে না।।জিজ্ঞেস করলেই ঝগড়া শুরু হয়।আস্তে আস্তে এটা নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।সাজ্জাদ সম্পর্কে নানা ধরনের বাজে কথা মিনুর কানে আসতে থাকে। সাজ্জাদ এখন মিনুর গায়ে হাত উঠাতেও লজ্জাবোধ করে না।
 মিনুর বাবার প্রতি বুকভরা অভিমান হয়। তাই সে বাবাকে এ সব কিছুই বলেনা।দিনে দিনে সে নির্যাতন সহ্য করতে থাকে।বাবার ভুলের প্রায়চিত্ত সে এভাবেই করতে থাকে।একসময় খুবই অসহ্য হয়ে ওঠে। আর মানতে পারেনা।সে সিদ্ধান্ত নেই সুইসাইড করবে।। বাবার প্রতি রাগ করে অনেক দুরে চলে যেতে চায়। তারপর সে এক প্রতিবেশীকে দিয়ে ভাঁজ করা আর একটা তাল পাখা কেনে।জীবনের সব  কথা সে সেদিন সাজ্জাদকে লেখে। সাজ্জাদের দেওয়া তালপাখাটা গোপনে বের করে আবার পড়তে থাকে।শেষের লাইনগুলোতে তার চোখ আটকে যায়।লেখা ছিলো " মিনু জীবনে যদি কখনও বিপর্জয় নেমে আসে তবে নিজেকে হারানোর চেষ্টা করবে না। জীবনকে ভালো বাসতে শিখবে। 
 তুমি নিজে যদি নিজের জীবনকে ভালবাসতে না পারো তাহলে অন্যরা কি করে ভালবাসবে তোমায় বলো। মনে রেখো, তোমার আত্মার ভিতরে আমার বসবাস।তুমি যেমনটি রাখবে, আমি তেমনটি থাকবো।তোমার নিঃশ্বাসে আমার নিঃশ্বাস বহে।যদি কখনও হারিয়ে যাও সেদিন আমিও হারিয়ে যাবো।জীবন মানে পরাজয় নয়।জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র যুদ্ধ ক্ষেত্র।তাই যে কোনো পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে হবে। আমি যে তোমার মধ্যেই বেঁচে থাকতে চাই মিনু।প্লিজ আমাকে কখনও মেরে ফেলবে না।
 আমি তোমার চোখেই আকাশ দেখতে চাই। মিনু বার বার লাইনগুলো পড়তে থাকে। আবারও তালপাখাটা বুকের সাথে চেপে ধরে  হু হু করে কেঁদে ফেললো। আমাকে মাফ করো সাজ্জাদ। আমি ভুল সিধান্ত নিতে যাচ্ছিলাম।আর কখনও এমন করবোনা সাজ্জাদ। তুমি আমাকে বাঁচার পথ দেখালে। পাখাটাকে অনেকক্ষণ আদর করলো,সারা পাখায় হাতের পরশ দিতে লাগলো।চুম্বন করলো।আবারও বুকের সাথে পাখাটা চেপে ধরে বলল,আমি তোমাকে কখনও হারাতে দেবো না সাজ্জাদ ভাই।তুমি এইভাবেই আমার ভিতর বেঁচে থাকবে।।তারপর পাখাটা নিয়ে আস্তে আস্তে করে বাতাস নিতে লাগলো।মিনুর সারা শরীর বাতাসের পরশে শীতল হতে লাগলো।। বাতাস নিতে নিতে বুকের উপর পাখাটা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।
ads banner
Share the content if you like it.


ads banner

Bangla eDaily to resume soon