Select language to read news in your own language


গল্পটি পড়ুন এবং আপনার লেখা গল্প Upload করে অন্যকে পড়ান। SatSakal Facebook Page টি লাইক করে সঙ্গে থাকুন।


গল্প, প্রতীক্ষার প্রহর পেরিয়ে


 ডাঃ উজ্জ্বল ঘোষ

 নেপুরার  কাছে ঝিঁকু নদীর বাঁকে তখনও আঁধার নামেনি   | জামদার ঘাটে একদল ছেলে খেলা করছে | নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধ হেঁটে চলেছে |  পরনে হাঁটুর ওপরে খাটো করে পরা ময়লা ধুতি | গায়ে হাতা ওয়ালা ছেঁড়া মলিন গেঞ্জী | বাঁ কাঁধে ঝোলা ব্যাগ আর এক হাতে বাঁশের লাঠি | কেমন যেন উদাস  একটা ভাব | 

 বিকাশ জিজ্ঞেস করে "কোথায় যাবেন? "
বৃদ্ধ কাঁপা গলায় বললেন .." ব্যাঙদা ....I"
"আপনার বাড়ী কোথায়?"
"ওই গাঁয়েই রে বাপ ....  ঠিক ঠাউর করতে পারছি নাই  কনদিকে রাস্তাটা | অনেকদিন আগে বৌ টার সাথে ঝগড়া করে রাগ করে ঘর ছাড়্যেছিলম | তখন গায়ে বল ছিল | কাজ কম্ম করে ভালই ছিলম  | এখন আর পারছি নাই রে বাপ ... মাঝে মাঝেই শরীর টা খারাপ হচ্ছ্যে | "

একটু দুরেই দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলেন এক বৃদ্ধা | একটু আগেও আপন মনে হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভাঙছিলেন | এই বৃদ্ধের সাথে কথা বলতে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়েছেন | এখানেই একদিন পাথর ভাঙতে ভাঙতে স্বামী স্ত্রীতে তুমুল ঝগড়া বাঁধে | তারপরেই বেপাত্তা স্বামী | সে প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা | 

এই তিরিশ বছরে নিজের শরীর খারাপ , বন্যা আর খুব আবহাওয়া খারাপ ছাড়া একদিনও পাথর ভাঙা ছাড়েনি বুড়ি | ওটাই ওঁর বেঁচে থাকার রসদ | অপেক্ষার প্রহর গোনার  সাথে জীবন জীবিকার নীরব কাহিনী | বুড়ি জানে তার প্রানের মানুষ একদিন ফিরে আসবেই | 

লোকে কতও  বলেছে...."ব্রাহ্মন  ডেকে  শ্রাদ্ধ করে  দে! এতোদিন কি আর কেউ  বেঁচে থাকে! আর বেঁচে থাকলে ঠিক ফিরে আসতো | তাছা়ড়া বিধবা ভাতাটা পেলে আর এই বয়সে এতো খাটতে হতো না l"

বুড়ি কারো কথা শোনেনি  | আজোও কাঁপা কাঁপা হাতে সিঁথিতে সিন্দুর পরে বুড়ি | মায়ের জেদকে  ভালো চোখে নেয়নি ছেলেরা | ওয়ারিশ সার্টিফিকেট না বের করতে পারার কারনে যেটুকু জমি জায়গা সবই তো বাপের নামে | তাই অবাধ্য মাকে ছেড়ে  তারাও বৌ বাচ্চা নিয়ে নিজের মতো করে আছে | 

আজ এতোদিন পর জামদার ঘাটে সন্ধ্যার আকাশে বুড়ি একসাথে চাঁদ ও সূর্যকে দেখতে পাচ্ছে!

এই কি এই তার স্বামী সূর্য সর্দার! 

হ্যাঁ,ওই তো সে বলছে ..... ... "সূজ্জু সদ্দার  আমার নাম | ঠিক ইখেনটাই আমার বৌ টার সঙে গন্ডোগোল লাগ্যে ছাড়ে চলে গেছলম বাপ  | এখন বৌ টার কথা দমে মনে পড়ে | কুথায় আছে, ক্যামন আছে? কে জানে! "

বুড়োটার কথা শুনে বুড়ির বুকের ভেতরটা আনচান করে ওঠে |  আর থাকতে পারে না | সেই একই ঢং কথা বলার | তিরিশ বছরে একটু বদলায় নি কথার ভঙ্গিমা | বুড়ি নিশ্চিত এই তার বেপাত্তা হওয়া স্বামী | অতঃপর দৌড়ে  বুড়োর  কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে পা জড়িয়ে ধরে | বুড়োও জড়িয়ে ধরে বুড়িকে | আজ আনন্দ  অশ্রুর প্লাবন  নদীর বুক জুড়ে |

বিকাশ  চোখের সামনে বুড়ির ভালোবাসার গভীরতা অনুধাবন করার শুধু চেষ্টা করে  |
ads banner
Share the content if you like it.